সিজন-১, পর্ব # ২
নুসরাতের কণ্ঠে:
গোসল সেরে শরীর শুকিয়ে একটা হলুদ রঙের ফুল স্লিভ মেক্সি পরে নিলাম আমার পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি শরীরটাকে ভালোমতো ঢেকে দেয়ার জন্য। আমি চাই না আমার শরীরের কোনো আঘাতের চিহ্ন মাহবুবের মায়ের চোখে পড়ুক। ডাইনিং রুমে ঢুকে দশ-চেয়ারের ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে বসে পড়লাম চুপচাপ। প্রাণপণ চেষ্টা করছি চোখের দৃষ্টি যেন সোনালী রঙের কাঠের টেবিলের উপরেই আবদ্ধ থাকে। এই ডাইনিং টেবিলটার উপরে ঝুলানো ঝাড়বাতিটি আমার খুব ভালো লাগে। স্যুইচ টিপলেই তা রংধনু আলোয় জ্বলে উঠে আবার নিভে যায়। তারপর আবার জ্বলে। জোনাক পোকার মতো তার জ্বলা আর নিভে যাওয়া দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উপরের দিকে তাকাচ্ছি না। যদি দুর্ঘটনাবশত মাহবুবের চোখে চোখ পড়ে যায় তাহলে নির্ঘাত তার সামনে রাখা গ্লাসের পানি আমার মুখে ছুঁড়ে মারবে। আমি সে সুযোগ কখনোই তাকে দিতে পারি না।
সিজন- ১, পর্ব- ৩
কবির
উপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে শিমুলতুলোর মতো শুভ্রশাদা মেঘের উড়োউড়ি, চোখ ফেরালেই বর্ণীল যতো পাখির ডানা ঝাপটানো, নিচে ছোটো ছোটো পাহাড়, পাহাড়ের কোলে বিস্তৃত সবুজ চাবাগান, যেন দৃষ্টির সীমানা অবধি সবুজের গালিচা বিছানো, গালিচায় ঝুলি কাঁধে কৃষ্ণাভ চা-কন্যাদের ইতস্তত হাঁটাহাঁটি! আনারস, লেবু আর সারি সারি রাবার বাগান, ঘন বন, বনের গহীন থেকে ভেসে আসা হিংস্র প্রাণীর রোমাঞ্চ জাগানিয়া ডাক, খনিজ গ্যাসকূপ, হ্রদ, হাওরের শান্ত জলরাশি, জলপ্রপাত, জলপতনের বিরামহীন শব্দ- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন একটা জায়গা- শ্রীমঙ্গলে চাকরি করা নেহাৎ ভাগ্য ছাড়া আর কী হতে পারে?
রায়হান তরফদারের তিনটা রিসোর্টের খাবারের ব্যবস্থা করার সকল দায়িত্ব কবিরের হাতে। ছয় মাস সময়ের মধ্যেই সে তার রন্ধনশৈলী ও সততা দিয়ে রায়হান তরফদার ও তার সহধর্মীনির বেশ কাছের মানুষ এখন। রায়হান তরফদারের স্ত্রী রহিমা আক্তার তাকে রীতিমতো মায়ের মতোই স্নেহ করেন। তাদের বাড়িতে প্রায়ই রান্না করার ডাক পায় সে। মায়ের মমতায় দেখা মানুষটার জন্য নিজ হাতে রান্না করতে বেশ ভালো লাগে তার। রায়হান তরফদারের স্ত্রীকে প্রথম দিকে সে ম্যাডাম ডাকতো। কিছুদিন আগে তিনি নিজে থেকেই ম্যাডাম ডাকতে নিষেধ করে দিয়েছেন। বলেছেন, আমি তোমাকে আমার ছেলের মতোই দেখি। নিজের ছেলের মুখে ম্যাডাম ডাক কার ভালো লাগে বলো? তুমি মা ডাকতে না পারো, আন্টিতো ডাকতে পারো। এরপর থেকে কবির তাকে আন্টি ডাকে। আন্টির যে কোনো ডাকে সাড়া দিতে পারলে তার মন ভালো লাগায় ভরে যায়। তার জন্য রান্না করাটাকেও কবিরের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। খাবারের এতো নিপুণ সমঝদার সে খুব কম দেখেছে। যেনতেন ভাবে রান্না করে তাকে বিমোহিত করা মোটেও সম্ভব না। এ জন্যই তার জন্য কিছু রাঁধতে গেলে সে বেশ থ্রিল অনুভব করে। তার পাতে খাবার তুলে দেয়ার পর থেকে তিনি তা মুখে নেয়ার সময় পর্যন্ত তার হার্টবিট বেড়ে যায় নিজের অজান্তেই। কিছুতেই সে স্বাভাবিক থাকতে পারে না। ছেলেবেলায় প্রথম খেলা ক্রিকেট ফাইনালের কথা মনে পড়ে যায় তার। ম্যাচ টেম্পারমেন্ট না থাকায় ঐ ম্যাচের শুরু থেকেই তার বুক যেভাবে ঢিপঢিপ করা শুরু করেছিল, আন্টির জন্য খাবার রান্নার পর থেকে তার খাবার মুখে দিয়ে মন্তব্য শুনার আগ পর্যন্ত প্রতিবার তার একই অনুভূতি হয়। আজ আন্টি তার ছোট ছেলের বাসায় কবিরকে নিয়ে এসেছেন। তার অনেক দিনের নাকি শখ ছোট ছেলে আর ছেলে বউকে তিনি কবিরের হাতের রান্না খাওয়াবেন। অনেক দিন থেকে আন্টি তাকে বলে আসছেন একদিন তার সাথে ছোট ছেলের বাংলোতে যেতে হবে। আজ সেই দিন। আজ কবির ঠিক করে রেখেছে তাদেরকে ব্যাম্বো চিকেন খাওয়াবে। এই রান্নাটা সে শিখেছিল গত বছর রাঙামাটি বেড়াতে গিয়ে। ব্যাম্বো চিকেন অর্থাৎ বাঁশের চোঙার ভেতর রান্না করা মুরগির মাংস পাহাড়ে খুবই জনপ্রিয়। শুধু মুরগি নয়, মাছ বা শুটকিও রান্না করা যায় এই চোঙার ভেতরে। চাকমারা একে চুমো গোরাং বলে আর মারমারা বলে ক্যাং দং হাং। এই রান্নাটার জন্য প্রয়োজন বাঁশ। কাঁচা বাঁশ হলে খুব ভালো হয়। কাঁচা বাঁশে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় সহজে পুড়ে যায় না। দীর্ঘ সময় আগুণে রাখা যায়। মাংসের টুকরোগুলো যেন ছোট হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষভাবে। রান্নার জন্য মাছ বা মাংস একটি পাত্রে রেখে তার মধ্যে পরিমাণমতো তেল, পানি, লবণ, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা দিয়ে ভালোভাবে মাখাতে হয়। বাঁশের চোঙার ভেতর মুরগির মাংস রান্নার এই পদ্ধতিতে পানি কিংবা তেল কোনোটাই ব্যবহার করা হয় না। চুলার এক প্রান্ত খোলা থাকে, কিছুক্ষণ পরে কলাপাতা মুড়ে বাঁশের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়। এবার বাঁশটা কয়লার আগুণে পুড়লেই ব্যাম্বো চিকেন তৈরি হয়ে যায়। বাঁশটা পুড়ে কালো হয়ে গেলেই বুঝে নিতে হবে বাঁশের ভেতরের মাংস রান্না হয়ে গেছে। খেয়াল রাখতে হবে পুরো বাঁশের চোঙাটি যেন সবদিকে সমান তাপ পায়। ব্যাম্বো চিকেন রান্নার মুন্সিয়ানা আসলে এখানেই দেখাতে হয়। খুব সতর্কতার সাথে বাঁশটি চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হয়। রান্না করার কৃতিত্ব আসলে তখনই যখন তা মানুষের মনে একটা মোহের সৃষ্টি করবে। পাতের নির্দিষ্ট খাবার শেষ করার পর আবার খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে খাবারের যোগান যেন আর তখন না থাকে। একবার দেখানো ম্যাজিক একই দর্শককে ঘুরে ফিরে কয়েকবার দেখালেই ম্যাজিকের রহস্যটি যেমন দর্শকের চোখে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায় তেমনি খাদককে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিয়ে দিলে সেই খাবারের স্বাদটা তার কাছে তখন সাধারণ হয়ে যায়। কবির আজ খুব মনোযোগ দিয়ে রেঁধেছে কারণ আজকের এই রান্নার উপলক্ষ আন্টির ছোট ছেলে আর তার ছেলে বউ। কবির জানে আন্টি তার এই ছেলে বউকেও ভীষণ ভালোবাসেন। নিজের মেয়ের মতোই দেখেন। কোনো এক বিশেষ কারণে তার এই ছেলে বউয়ের জন্য তার আলাদা নজর। খাবার তৈরি শেষে টেবিলে তা পরিবেশন করে দিতেই আন্টি তাকেও তাদের সাথে বসে খাওয়ার অনুরোধ করলেন। চেয়ারে বসতে বসতেই উল্টোদিকের চেয়ারে বসা মেয়েটার দিকে চোখ পড়তেই কবিরের চোখদুটো স্থির হয়ে গেল। জুবুথুবু হয়ে বসা মেয়েটাকে যেন লুনার মতোই লাগছে। না, একে যেন সেই মৎস্যকুমারীর মতো লাগছে যে সেদিন তাকে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছিল। মেয়েটির মুখাবয়বের সাথে আসলেই লুনার অনেক মিল লক্ষ্য করলো সে। শুধু গালের তিলটা ছাড়া মুখের গড়নে এত মিল দেখে সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। এটা কীভাবে সম্ভব! কিছুক্ষণ পরেই সে তার ভুল বুঝতে পারলো। লুনার সাথে এ মেয়ের যে মিল সেটা হচ্ছে চুলে। এমন মসৃণ ঝরঝরে লম্বা চুল সে শুধু লুনার মাথাতেই দেখেছিল। এমন চুল দেখেই পাবলো নেরুদা লিখেছিলেন, তোমার চুলের বর্ণনা করে/ কাটিয়ে দিতে পারি তামাম জীবন।
-কী হলো নুসরাত খাওয়া শুরু করো। দেখো এই ছেলে কেমন রাঁধতে জানে।
আন্টির কথায় কবির বাস্তবে ফিরে এলো।
নিজের রান্না নিজের কাছে ভালো লাগে না- ওস্তাদদের এই আপ্তবাক্য সবসময়েই কবিরের কাছে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিজের রান্না তার সবসময়েই ভালো লাগে। ব্যাম্বো চিকেন রেঁধে আগেও সে অনেক খেয়েছে। কিন্তু আজকের রান্না তার কাছে অসাধারণ ঠেকছে। সে বেশ বুঝতে পারছে, অন্যান্যরাও নিঃশব্দে হাত চেটেপুটে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার রান্না করা খাবার খাচ্ছে। আসলেই অধুনা কবি মুজিব ইরম ঠিকই বলেছেন- জীবন রসনাময়, আর সব ফাঁকি। নিজেকে রন্ধনশিল্পি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বলে মনে মনে স্রস্টার কাছে তার অফুরান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো কবির।
-শোনো মাহবুব। তুমি তো কাল এক সপ্তাহের জন্য শুটিংয়ে দিনাজপুর যাবে। কবিরকে বলেছি তোমার অবর্তমানে তোমার এ বাংলোটা যেন দিনে একবার এসে দেখে যায়।
কবিরকে এর আগে আরো দুইবার বাবার রিসোর্টে দেখেছে। শুরু থেকেই কবিরকে তার কেমন যেন গেঁয়ো-টাইপ একটা মানুষ বলে মনে হয়েছে। হতে পারে কবির বয়সে মাহবুবের তিন চার বছরের বড়ো। তাই বলে একটা মানুষ আচার-আচরণে এতো আনস্মার্ট হয় কী করে সে ভেবে পায় না। সব দোষ আসলে তার ঐ বাবুর্চিগিরি পেশাটার। পড়াশোনা জানা একটা ছেলে কী করে বাবুর্চিগিরিকে পেশা হিসেবে নেয় তা আসলেই সে বুঝতে পারে না। তাই সে কিছুতেই কবিরকে তার বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারে না।
-মা, বাড়ি দেখাশোনার জন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে না। আদুরি তো আছেই।
– ননস্যান্স! সামনের লনের ঘাস কে কাটবে শুনি? তুমি যখন সিনেমার নায়িকাদের সাথে বৃষ্টিতে নাচানাচি করতে থাকবে তখন তোমার বাসার পুলের পানি কে পরিস্কার করবে, মাহবুব? আদুরি এমনিতেই অনেক কাজ করে। সারাটা বাসা দেখাশোনা তো সেই করে। তার কাজ আর বাড়ানো ঠিক হবে না।
তার পেশার প্রতি মায়ের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মাহবুব মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বললো, মা, তুমি জানো এসব করার জন্য বাগানে অনেক মানুষ আছে। তাদের বললেই এসে সব কাজ করে দিবে।
-কাজ করে দিবে, কিন্তু সেই কাজ দেখবেটা কে? আজকাল বাগানের শ্রমিকরাও ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে। ঠিকমতো তদারকি না করলে কিছুই করতে চায় না।
মাহবুব বসেছে নুসরাতের ঠিক পাশের চেয়ারে, প্রয়োজন হলে যাতে সে টেবিলের নিচে তার পা দিয়ে নুসরাতের পায়ে আঘাত করে বেফাঁস কোনো কথা আটকে দিতে পারে।
-তা মামনি নুসরাত, দিনকাল কেমন কাটছে তোমার?
এই একটা প্রশ্ন ইতোমধ্যে মা তিনবার করে ফেলেছেন নুসরাতকে। মাহবুবের ভয় এখানেই। যদি নুসরাত উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয়!
-সবকিছুই ভালো যাচ্ছে, মা।
নুসরাতকে নিশ্চুপ দেখে মাহবুব নিজেই উত্তর দিলো।
-আমি তো নুসরাতের সাথে কথা বলছি মাহবুব। নুসরাত?
নুসরাতকে নিশ্চুপ দেখে মাহবুব তার ডান পা অল্প একটু ডানে সরিয়ে নুসরাতের পায়ের পাতায় মৃদু একটা চাপ দিল যা নুসরাতকে বাস্তবে নিয়ে এলো।
-সবকিছুই ভালো কাটছে, মা।
অবশেষে নুসরাত উত্তর দিলে মাহবুব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
-তুমি শিউর?
মায়ের প্রশ্নে এবার মাহবুবের গলায় খাবার যেন আটকে গেল। সে খুক খুক করে কেশে উঠলো। কবির তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। এক ঢোঁক পানি গিলে নিলে মাহবুবের কাশি থেমে গেল।
-শোনো কবির। তুমি দিনে একবার এলেই হবে। আদুরি তো আছেই। নুসরাতও থাকবে। তুমি এসে শুধু লনের ঘাসগুলো ছাটিয়ে দিও। আর আদুরির যদি কিছু লাগে তাহলে কিনে দিও।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে মাহবুব মায়ের প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে কৌশলে বিষয়টা থামিয়ে দিলো।
-আচ্ছা মাহবুব, তুমি যখন দিনাজপুর যাচ্ছো নুসরাতকে সাথে নিয়ে যাও। শুনেছি দিনাজপুর খুব সুন্দর একটা এলাকা। সেও দেখে আসতে পারতো। নুসারাত, তুমি দিনাজপুর যেতে চাও না?
-নুসরাত তার অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে মা। আর তাছাড়া সেও তোমার মতোই। আমার পেশা নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই।
রহিমা আক্তার ভ্রু কুঁচকে মাহবুবের দিকে এক পলক তাকিয়েই নুসরাতের দিকে তাকালেন। তিনি খেয়াল করেছেন নুসরাত একবারও মাথা তুলেনি, একবারও কারো মুখের দিকে তাকায়নি। তিনি বুঝতে পারলেন না, মাহবুব কেন নুসরাতকে করা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
-তিনি ঠিকই বলেছেন মা। আর তাছাড়া গতকাল থেকে শরীরটাও খারাপ লাগছে।
সতর্ক মাহবুব এবার বেশ জোরেই নুসরাতের পায়ে চাপ দিল। হঠাৎ এমন ব্যথা পেয়ে নুসরাত চিৎকার করে দাঁড়িয়ে পড়লো।
রহিমা বেগমের হাত থেকে চামচ টেবিলের উপর পড়ে গেল। অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো নুসরাত?
মাহবুবের দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা হলো। এই পৃথিবীর আর কাউকে সে পরোয়া করে না। শুধু মাকেই তার যত ভয়। এত কঠিন মহিলা সে তার জীবনেও দেখেনি। চাইলেই মুহূর্তে যে কোনো ডিসিশন নিয়ে নিতে পারেন পূর্বাপর কিছু না ভেবেই। ছোটবেলার সেই ভয়াবহ শাস্তির কথা মনে পড়লে আজও তার গা দিয়ে ঘাম ঝরে পড়ে। রাতে মার কথামতো পড়তে বসেনি বলে সারাটা রাত তাকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। বাবা আর দাদা মিলে কত করে যে অনুরোধ করেছিলেন তাকে ভেতরে নিয়ে আসতে কিন্তু মা কারো কথা শুনেননি। পুরোটা রাত তাকে বাসার বাইরের বারান্দায় কাটাতে হয়েছিল। উফ! মাহবুব সেই রাতের কথা ভাবতেও ভয় পায়। এখন কী হবে নুসরাত যদি মাকে সব বলে দেয়। মাহবুব খুব ভালো করে জানে বাবা-মা তার এই সিনেমায় যাওয়াটাকে পছন্দ করেননি। আর সেকারণেই তার প্রতি তাদের এত বিরাগ। তার বিয়ের সময়তো বাবা রীতিমতো তার সম্পত্তি থেকে মাহবুবকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দিয়েই দিয়েছিলেন। নুসরাতকে বিয়ে করে কোনোরকম রক্ষা। নুসরাত কী করবে এখন? নুসরাত কী মাকে এবার সবকিছু খুলে বলে দেবে?